——- শামীম চক্রের খুঁটির জোর কোথায় জানতে চায় সাধারণ জনগন।
হলি সিলেট ডেস্কঃ
সিলেট নগরীর বালুচর জোনাকি আবাসিক এলাকায় একটি প্রভাবশালী চক্র মাসজিদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রকাশ্যে দিবালোকে পরিবেশ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখীয়ে অবৈধভাবে দীর্ঘদিন থেকে টিলার মাটি কেটে প্লট তৈরীর কাজ অব্যাহত রেখেছে। অজ্ঞাত কারনে সিলেট পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন নীরব।
গত শুক্রবার সকালে দৈনিক সোনালী সিলেট পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার এম ইজাজুল হক ইজাজ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে সরেজমিনে সিলেট নগরীর ৩৬ নং ওয়ার্ডের বালুচর জোনাকী আবাসিক এলাকায় পরিবেশ বিনষ্ট করে প্রকাশ্যে দিবালোকে নির্বিচারে পাহাড় কাটার দৃশ্য অবলোকন করেন ।
জোনাকী আবাসিক এলাকার একটি কুচক্রীমহল গায়ের জোর খাঁটিয়ে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন পাহাড় কেটে ট্রাকে করে মাটি বিক্রি করছে। এছাড়া নিচু ভূমিতে টিলার মাটি ভরাট করে প্লট তৈরী করছে। এসব অভিযোগের তথ্য প্রমান সংগ্রহ করতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন,
সিলেট ইন্জিনিয়ারিং কলেজের গার্ড শামিমের নেতৃত্বে মল্লিক আব্দুল মছব্বির মসজিদ সংলগ্ন পাহারটির মাটি কেটে নিচের অংশের প্লট ভরাট করা হচ্ছে।
আর এই পাহাড় কাটার নেতৃত্ব প্রদান করছে ইন্জিনিয়ারিং কলেজের সিকিউরিটি গার্ড শামিম। শামিমের নেতৃত্বে রয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
এলাকার নিরিহ জনসাধারণের মধ্যে এনিয়ে দেখা দিয়েছে একাধিক প্রশ্ন, পরিবেশ আইন অনুযায়ী টিলা কাটা একটি মারাত্মক শাস্তিমূলক অপরাধ, এজন্য সরকার পরিবেশ আইন বাস্তবায়নের জন্য সিলেটে পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে । এছাড়া রয়েছে থানা প্রশাসনও। এত বাঁধা উপেক্ষা করে শামিম চক্র কিভাবে সাহস পায় অবৈধভাবে প্রকাশ্যে টিলা কাটার। স্থানীয় জনতা বেশ ক্ষোভের সাথে বলছেন গার্ড শামিমচক্রের খুঁটির জোর কোথায়.. ? নাকি অন্যদের মত সাংবাদিকরাও ম্যানেজপর্বে পকেট ভারি করে দেখেও না দেখার বান করছেন।
এমন অনেক নানা মুখী অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন হলি সিলেটকে সিনিয়র সাংবাদিক এম ইজাজুল হক ইজাজ।
তিনি আরোও বলেন,
বালুচর জোনাকী আবাসিক এলাকায় টিলার মাটি কাটার দৃশ্যের ছবি তুলতে গেলে জনৈক সিকিউরিটি গার্ড শামিম সহ তার বাহিনীর তোপের মুখে পড়তে হয় এবং দুষকৃতচক্র নিজেদের অপরাধকে গা ডাকা দিতে তাঁর উপর বেশ চড়াও হয়। এসময় শামিম ও তার বাহিনী বেশ উত্তেজিত হয়ে মারার জন্য তাড়িয়ে এসে সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলে, কোনো ধরনের সংবাদ প্রচার করা হলে দেখে নেয়ার হুমকি প্রদান করে। মাটি কাটার দৃশ্য মোবাইলের ক্যামেরায় ছবি তুলা হয়েছে উল্লেখ করে মাটি খেকো শামিম সাংবাদিকের হাতে থাকা মোবাইল কেঁড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এসময় উপস্থিত কিছু লোকজনের সহায়তায় সাংবাদিক ইজাজকে নিরাপদে সরিয়ে দেয়া হয়। ঘটনার সময় নিজের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সন্দেহ হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত স্থানীয় প্রশাসন শাহপরান থানার ওসিকে জানানো হলে ওসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন।
এদিকে ঘনঘন বৃষ্টি হওয়ার ফলে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টিলার উপরের অংশে মাটি কেঁটে রাখা হয়। আর এই বৃষ্টির পানিতে ধুয়েমুছে নেমে আসা বালিতে লোক চলাচলের সড়ক পর্যন্ত ঢেকে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে কাটা টিলা থেকে নেমে আসা বালু সড়কে স্তুুপ হয়ে যানচলাচল অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এব্যাপারে তারা এজন্য পাহাড়-টিলা রক্ষায় কতৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।
প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার জানান, পাহাড়-টিলা কাটা বন্ধে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। রাতে পাহাড় কাটার খবর পেয়েছেন। কিছুদিন পূর্বেও তাদের দপ্তরের লোকজন সেই এলাকায় গিয়েছেন। কারা কাটছে সেই ব্যাপারে তথ্য নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাহাড়-টিলা বেষ্টিত জোনাকী এলাকা সম্প্রতি সিলেট সিটি কর্পোরেশনে অন্তভুক্ত হওয়ায় সাধারণ মানুষের কাছে এলাকার চাহিদা বেড়ে গেছে। আবাসিক এলাকা হিসেবে গুরুত্ব বাড়ায় এলাকায় জায়গা ক্রয়-বিক্রয় বেড়ে গেছে। বাড়িঘর নির্মান ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে প্লট তৈরি ও বাড়িঘর নির্মানে কাটা হচ্ছে পাহাড়-টিলা। স্থানীয়রা জানান, টিলার উপরে ঘর বানিয়ে দিয়ে সেখানে শ্রমিকদের পরিবার নিয়ে বিনা ভাড়ায় থাকতে দেয়া হয়। শ্রমিকরা দিনে অন্য কাজ করে, রাতে টিলা কাটে। বর্ষা কালে টিলায় খুঁড়ে মাটি আলগা করে রাখে। বৃষ্টি হলে টিলার মাটি ধসে পড়ে। নামপ্রকাশে অনিচছুক স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, এখানে টিলা-পাহাড় গুলো যেন দেখার কেউ নেই। টিলা কাটার ফলে নেমে আসা বালুতে রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। বালুতে ড্রেন গুলো ভরাট হয়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাস্তায় বালুর স্তুপ তার উপর দিয়ে পানি গড়িয়ে যাচেছ। ফলে রাস্তা দিয়ে চলাচলই কষ্টকর ও চরম ভোগান্তির হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, রাস্তাঘাট সর্বত্র শুধু বালু। প্রভাবশালীদের ভয়ে সাধারণ মানুষ কথা বলতে পারেন না। পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি দুর্ভোগ নিয়েই প্রতিনি সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হয়।
স্থানীয় এক যুবক জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের ঢিলেমীর কারনেই এখানে পাহাড় কাটা বন্ধ হয় না। লোক দেখানো অভিযান হলে কিছুদিন বন্ধ থাকে পরে আবারো শুরু হয় পাহাড় কাটা। পাহাড় থেকে নেমে আসা মাটিতে রাস্তা কয়েক ফুট বালির নিচে চলে যায়। যাতায়াতে চরম দূর্ভোগের শিকার হতে হয়। জোনাকীতে প্রবেশ করলেই রাস্তা গুলো মাটিতে ডাকা রয়েছে দেখতে পাবেন বলে জানান তিনি। পূর্বে অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও অন্য সংস্থার টহল থাকতো। ৫ আগস্টের পর থেকে কোন ধরনের বাধা ছাড়াই নির্বিচারে পাহাড় কাটছে প্রভাবশালী চক্র। এব্যাপারে শাহপরান (রহ.) থানার অফিসার ইনচার্জ মনির হোসেন এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর অথবা উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি। তবে এব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ফোন না ধরায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অন্তভূক্ত জোনাকী এলাকায় টিলা কাটার বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর বিষয়টি দেখে থাকে। তবে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় যতটুকু করার তারা করবেন।
সিটি কর্পোরেশনের ভিতরে এমন বেপরোয়াভাবে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখীয়ে অবৈধভাবে টিলা কাটা হচ্ছে তা কেউই মেনে নিতে পারছেন না। দেশে যদি এমন ঢিলেঢালা প্রশাসনিক ব্যাবস্থা তৈরী হয় তাহলে পরিবেশ রক্ষা অত্যন্ত দুঃসাধ্য হয়ে পরবে। অপরাধীরা আরো বেপরোয়া বেসামাল হয়ে উঠবে। তাই প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব ও দায়িত্ব সহকারে আইন বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।