সংবাদ শিরোনাম :
গিনেজ বুকে নাম লিখাতে চান শ্রীমঙ্গলের প্রবীণ পুরুষ রাম সিং গোঁড় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এম এ মালিক সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করবেন আজ। টমটম চালক আবুল খায়েরর হত্যা রহস্য উন্মোচন, এক আসামি গ্রেপ্তার শ্রীীমঙ্গলে চোরাইকৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার, আটক ১ আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উপলক্ষে রায়পুরায় র‍্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত শ্রীমঙ্গলে সারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন পুজা মন্ডর পরিদর্শন করেছেন পিএফজি’র নেতৃবৃন্দ শ্রীমঙ্গলে টমটম চালকসহ অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার কমলগঞ্জে চোরাই পথে আসা ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার ভারতীয় শাড়ী উদ্ধার হলি সিলেট সহ বিভিন্ন পত্রিকায় দূর্নীতির সংবাদ প্রচার হওয়ায় বিআরটিএ কর্মকর্তা রিয়াজুলের অন্যত্র বদলী মৌলভীবাজারে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ১জন নিহত
শ্রীমঙ্গলে সাব-রেজিস্ট্রারের অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদে দলিল লেখকদের কর্মবিরতি

শ্রীমঙ্গলে সাব-রেজিস্ট্রারের অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদে দলিল লেখকদের কর্মবিরতি

আমজাদ হোসেন বাচ্চু,ষ্টাফ রিপোর্টার:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর এর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির, কর্ম অবহেলাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালন করেছে উপজেলা দলিল দেখক সমিতি।
সোমবার (১৮ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে দিনব্যাপী কর্মবিরতি পালনকালে অভিযোগ এনে দলিল লেখকরা বলেন, শ্রীমঙ্গলে সম্প্রতি আসা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর প্রতি দলিলের মূল্যের উপর ১% থেকে ৫% পর্যন্ত কমিশন না দিলে কোনো দলিল করতে চান না। তাছাড়া প্রতিটি দানপত্র দলিল, এওয়াজ দলিল, ওছিয়তনামা দলিল, বায়না দলিল, নাদাবি দলিল, বাটোয়ারা দলিল, হেবা দলিল থেকে ৫ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়ে থাকেন। কথা অনুযায়ী তাকে টাকা না দিলে বিভিন্ন আইনী ফাঁক-ফোকর আর অজুহাত দেখিয়ে দলিল করতে চান না। এছাড়াও দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি গত দুই মাসে বিপুল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। দলিল লেখকদের কেউ শংকর কুমার ধরের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে চাইলে তিনি তাদের সাথে দুর্ব্যবহার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যসহ অসদাচরণ করে থাকেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফজলুর রহমান জানান, শ্রীমঙ্গলে গত ফেরুয়ারি মাসে শংকর কুমার ধর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিভিন্ন সময়ে দলিল লেখকরা এর প্রতিবাদ করলেও কোনো সমাধান হয়নি। উল্টে তাদের সাথে অসদাচরণসহ নানা কারণ দেখিয়ে দলিল না করার হুমকি দিয়ে অনিয়মের মাত্রা বাড়িয়ে দেন তিনি।দলিল রেজিস্ট্রি করতে গেলে দলিল প্রতি ১% থেকে ৫% পর্যন্ত কমিশন দাবি করেন। অন্যথায় তিনি দলিল করতে নারাজ। এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে আমরা একাধিকবার সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর এর সাথে বৈঠকে বসেছি, কোনো সমাধান হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের দাবিতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সকল দলিল লেখকদের সাথে নিয়ে কর্মবরিত পালন করছি। বিষয়টি সমাধানের আগ পর্যন্ত আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আমরা দলিল লেখা বন্ধ রাখবো।
উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. ছায়েদ আলী বলেন, অতিরিক্ত টাকা ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার কোনো দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। এমনকি উত্তরাধিকার দলিলেও অতিরিক্ত টাকা দাবি করেন। নানা অজুহাতে তিনি সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন হয়রানি করেন। আমরা যারা দলিল লেখক রয়েছি তাদের মধ্যে অনেকেই বয়স ও পেশায় সিনিয়র ব্যক্তি রয়েছেন তাদের সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেন।
হবিগঞ্জ থেকে আব্দুল আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, রমজান মাসে অনেক দূর থেকে দলিল করতে এসে ফিরে যাচ্ছি। দলিল করতে না পারলে আমার খুব সমস্যা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যেন এ সমস্যার যেন দ্রæত নিরসন করেন। পারমিতা দেবনাথ নামের এক নারী বলেন, জমি বিক্রি করছি, কিন্তু দলিল না হওয়ায় টাকা পাচ্ছি না। আজকে অফিসে দলিল করতে এসে ঘুরে যাচ্ছি।
এদিকে সরজমিন গিয়ে বিষয়টি মিমাংসার জন্য কর্মবিরতি স্থগিত ঘোষণার অনুরোধ জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম। এসময় তিনি উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোঃ ছায়েদ আলী, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ফজলুর রহমানসহ সমিতির কয়েকজন নেতাকে নিয়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর এর কক্ষে এক বৈঠকে বসেন। দুইঘন্টাব্যাপী আলাপ আলোচনা শেষে দলিল লেখক সমিতির নেতারা বিষয়টি সুরাহা করতে পারেননি। তাই তারা কর্মবিরতি স্থগিতের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেননি। পরে দলিল লেখক সমিতির উপদেষ্টা ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তাফাজ্জুল হোসেন ফয়েজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ খোরশেদ আলী, ক্রীড়া ও সাংগঠনিক বিষয়ক সম্পাদক অনিক আচার্য্য, সদস্য মছদ্দর আলী, ফয়সাল আহমদ প্রমুখ এসে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এসময় সাব-রেজিস্ট্রারের কক্ষে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমার ধর তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, তা সত্য নয়। আমি সরকারি ফি’র বাইরে কারো কাছ থেকে বাড়তি কোনো ফি নেইনি। তিনি বলেন সরকার প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আইন করছে। জমি নিবন্ধন আইন দিন দিন আপডেট হচ্ছে। নতুন ভূমি আইন বাস্তবায়নে দলিল লেখকদের বা জমি মালিকদের আপত্তি থেকে কিছুটা ভুলবুঝাবুঝি হচ্ছে দলিল লেখকদের কর্মবিরতির কারণে আজ জমি নিবন্ধন করতে আসা জমির দাতা গ্রহীতারা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে এমন অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, দাতা গ্রহীতারা যদি দলিল লেখকদের দিয়ে দলিল লেখিয়ে নিয়ে না আসেন, আমার কি করার আছে। এব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা রেজিস্টার এস এম সোহেল রানা মিলনের মুঠেফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাঁর মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের থেকে জানা যায় জেলা রেজিস্ট্রার ৩দিনের ছুটিতে আছেন। এবিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবু তালেব জানান, কর্মবিরতির বিষয়টি শুনেছি। দলিল লেখকদের বক্তব্য কি তারা আমাকে আগে লিখিতভাবে জানাক, যদি সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের কোনো অভিযোগ থাকে, তারা আমাকে লিখিতভাবে জানালে আমি তদন্ত করে অভিযোগের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবো।

সংবাদটি শেয়ার করুন :





© All rights reserved © 2021 Holysylhet