ছাতকের গোবিন্দগঞ্জে প্রভাবশালী চক্র কর্তৃক সরকারি খাল ভরাটের অভিযোগ,এলাকা উত্তেজনা, যেন দেখার কেউ নেই
ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
ছাতকে সরকারি খাল দখল করে মাটি ভরাট করার অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালীর চত্রেুর বিরুদ্ধে। এতে ঐ এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রধান প্রধান খালগুলো দখলের মহোৎসব চলছে। প্রভাবশালীরা এসব খাল দখল করে বড় বড় ইমারত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে । এদিকে,খাল ভরাটের কারনে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার ফলে ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ জনগণ। এ যেন, দেখার কেউ নেই। সরকারি শত কোটি টাকার এ খালে মাটি ভরাটের ঘটনায় এলাকা চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। খাল ভরাটের কাজে এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে সাধারন মানুষকে হত্যার হুমকি সহ পুলিশের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগও রয়েছে এ প্রভাবশালী সেই চক্রটি বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার কেন্দ্র করে পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে এলাকার দুপক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দগঞ্জের সৈয়দগাঁও ছৈলাআফজলাবাদ ইউনিয়নের পুর্ব রামপুর মৌজার সুনামগঞ্জ সিলেট সড়ক সংলগ্ন সরকারী ’নয়ন জুলি খাল’। এ খাল দিয়ে প্রাচীন কাল থেকে আশ পাশ এলাকার পানি নিষ্কাশন হয়ে আসছে। ধীরে-ধীরে খালটি প্রায় মৃত রূপধারণ করছে। এ সুযোগে একটি স্বার্থান্বেষী মহল প্রায় শত কোটি টাকার সরকারি খাল দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে । এভাবে খাল ভরাট করা হলে গোবিন্দগঞ্জ নুতন বাজার এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী সহ এলাকার একাধিক লোকজন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, খাল দখল করার সুযোগ নেই। এ খাল দিয়ে বর্ষাকাল এছাড়াও কয়েক শতাধিক বাসা-বাড়ি বাজারের জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে।
সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্রবেশদ্বার গোবিন্দগঞ্জ ব্রীজ সংলগ্ন সরকারী ১ নং খতিয়ানভুক্ত খাল শ্রেণীভুক্ত প্রায় এক একর ১০ শতক ভুমি( নয়ন জুলি খাল) বলে উল্লেখ্য রয়েছে। ব্রীজ সংলগ্ন এ ভুমিতে প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য নির্ধারণ করে পরিদর্শন করেন জেলা ও বিভাগীয় কর্মকর্তারা। ইতি মধ্যেই একটি সাইনবোর্ডও সাটিয়ে দেয়া হয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জ ব্রীজ সংলগ্ন (নয়ন জুলি খাল) একদিকে সরকারী সম্পত্তি, অন্য দিকে এলাকার পানি নিস্কাশনের একটি প্রধান জলাধার। এ খাল ভরাট হলে এলাকার বৃহত্তর অংশ মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীণ হবে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী গোবিন্দগঞ্জ ব্রীজ সংলগ্ন খাল শ্রেনীভুক্ত সরকারী ১ একর ১০ শতক ভুমি ইজারা বা বন্দোবস্ত দেয়া সরকারী আইন পরিপন্থি। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক ও ভটেরখাল নদীর মিলনস্থল গোবিন্দগঞ্জের ব্রীজের গোড়ায় ওই ভুমিতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য এলাকাবাসী দাবী করে আসছেন।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রবেশদ্বার হিসেবে খ্যাত এবং সিলেট ও সুনামগঞ্জের ৪টি থানার মোহনা ছাতকে গোবিন্দগঞ্জের ওই ভুমিতে প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন অতিব জরুরী। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কসহ এর আশপাশ এলাকা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখতে পারবে বলে এলাকাবাসীর বিশ্বাস।
ভুমি পরিবেশ আইন ও বিধি রক্ষায় সুপ্রিম কোর্ট মোকদ্দমায় সড়ক সংলগ্ন সরকারী খাল, নদী-নালা, রাস্তা ভরাট, বানিজ্যিক স্থান হিসেবে ইজারা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক ও জেলা সড়কের উভয় পাশে অন্তত ১০ মিটার এলাকা পর্যন্ত কোন স্থাপনা না থাকার মর্মে উচ্চ আদালতে একাধিক রায় ও রয়েছে। এসব মামলার রায়ের আদেশ না মেনেই গায়েবি ইন্ধনে তারা এসব করছেন বলে এলাকার লোকজন অভিযোগ তুলেছেন। এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল কর্তৃক স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে শত কোটি টাকার সরকারি নয়ন জুলি খাল’দখল করার অভিযোগের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
উচ্চ আদালতের ১৫৪৬/২০১১ নং রীট আবেদনেও কার্যকর আদেশ জারি করেন। এছাড়া হাইকোট বিভাগের ২০১৩ সালে রিট মামলা দায়ের করেন যার নম্বার ৩৮৫৫। এ মামলা আদেশ বাস্তবায়ন এবং প্রাকৃতিক আদেশ বলে ২০১৪ সালে ১৬ এপ্রিল ভুমি মন্ত্রনালয় আইন শাখা ১ সিনিয়র সহকারি সচিব আলিয়া মেহের স্বাক্ষরিত প্রঞ্ছাপন জারি করেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে। এর প্রেক্ষিতে ২০০০ ও পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ বাস্তবায়নের জন্য এক আদেশে জেলা ও উপজেলার শহর এবং পৌর এলাকাসহ দেশের সকল খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধার ও খাল রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলা হয় ।
ওই ভুমিতে প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার লক্ষে একটি সাইনবোর্ডও সাটানো থাকা সত্ত্বেও গোপনে ইজারার নামে সরকারী ভুমি দখলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে এ চক্র। সরকারী ভুমি সরকারী কাজে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্যবহার করা বিধান থাকলেও ভুমি প্রশাসনের সহযোগিতায় স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি ওই ভুমি বাজার সংস্কারের নামে দখলের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষায় এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২২ সালে ২২ সেপ্টেম্বর উপজেলা ভুমি প্রশাসন গোপনে ইজারা প্রদানের জন্য ৯৮৭ নং স্মারকে জেলা প্রশাসন বরাবরে একটি প্রস্তাব পাঠান। এ নিয়ে এলাকায় চরম অসন্তোষ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভুমি মন্ত্রনালয় আইন অনুযায়ী সড়ক সংলগ্ন সরকারী খাল বা পতিত সড়ক ইজারা যোগ্য নয়।
এ বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা নিয়ে এখানে প্রস্তাবিত পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে সরকারী এ ভুমি ইজারা বা বন্দোবস্ত না দেয়ার দাবী করেন এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে নিবাহী কর্মকতা গোলাম মুস্তাফা মুন্না এঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলা পরিষদ এর কমিটিতে একটি প্রস্তাবে অনুমোদন করা হয়েছে। সরকারি খালে মাটি ভরাট করে বাজার সংস্কার করার উদ্দ্যোগ নিয়েছে উপজেলা পরিষদ।
এ ব্যাপারে থানার ওসি শাহ আলম জানান, মাটি ভরাট নিয়ে এলাকার দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে অশান্ত পরিবেশ শান্ত করেছেন তিনি। ##