বিশেষ প্রতিনিধি:
সিলেট শহরতলীর দক্ষিণ সুরমা থানার কদমতলী এলাকার ফেরিঘাট ও খোঁজারখলা এলাকার জিঞ্জির শাহ এর মাজার সংলগ্ন কাশেম ও তার মেয়ে জাসমিনের নেপথ্যে অবাধে চলছে অবৈধ ভারতীয় শিলংতীর ও নাইট তীর, জান্ডুমান্ডু, তিনতাস, জুয়া ও মাদকের রমরমা বাণিজ্য ।
মাদক আর জুয়ার ছড়াছড়িতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনসাধারনের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে । প্রকাশ্যে ভারতীয় নিষিদ্ধ শিলংতীর ও নাইট তীর, জান্ডুমান্ডু,তিন তাস জুয়া ও মাদকের আসর নিয়মিত বসলেও অপরাধের সাথে জড়িত মুল নায়কদের গ্রেফতার না করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সচেতন মহলের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন।
সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
বিভিন্ন সুত্র ও অনুসন্ধানে জানাযায়, দক্ষিণ সুরমা থানা এলাকাধীন সুরমা নদীর দক্ষিণ পাড়ের কদমতলী ফেরীঘাট এলাকায় কুখ্যাত জুয়াড়ী হারুন মিয়া ও লালাবাজারের জগলুর নেতৃত্বে চলছে অবৈধ জুয়া তিনতাস, জান্ডুমান্ড ও মাদক বানিজ্যের রঙ্গিন আসর। আগে জগলুর নেতৃত্বে লালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের বিপরীতে চলতো জুয়ার আসর তিনতাস শিলং ও নাইট তীর কিন্তু অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে জগলুর আস্তানা বন্ধ হয়ে পড়ায় খেয়াঘাটের কুখ্যাত জুয়াড়ী হারুনের সাথে মিশে যৌথভাবে কদমতলী ফেরিঘাট এলাকায় গড়ে তুলে শক্তিশালী জুয়া ও মাদকের সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেট।
প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকেই শুরু হয় জুয়ার আসর। সেই সাথে চলে ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা সহ মাদকের রমরমা ব্যবসা। পরিবহণ শ্রমিক, দিনমজুর ও স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী, কিশোর কিশোরীরা এই খেলায় অংশ নিচ্ছে। দৈনিক রোজগারের সমূদয় অর্থ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন এবং আস্তে আস্তে চুরি ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত হয়ে পরিবার ও সমাজের বিরাট ক্ষতি করছে। বাড়ছে সামাজিক অপরাধ সহ নানা অপকর্ম।
চাঁদনীঘাট এলাকার কজন ব্যবসায়ী জানান, চোখের সামনেই ইন্টারনেট ভিত্তিক নাইট তীর জুয়ার আসর বসে বিকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে। আমাদের দোকানের কর্মচারীরা বিকাল হলেই নাইট তীর ও জান্ডুমান্ডু খেলায় অংশ গ্রহণ করতে চলে যায় এতে আমাদের ব্যবসার মারাত্মক ক্ষতিসাধিত হয়। যারা এ ব্যবসার সাথে জড়িত তারা পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যদের সাপ্তাহিক চাঁদা দিয়ে থাকেন বিধায় তাদেরকে কেউ কিছু বলছে না কিংবা বন্ধের কোন পদক্ষেপও গ্রহণ করছেন না। আমরা চাই সব ধরনের তীর জুয়া ও মাদক বন্ধ করা হউক। নতুবা যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং পারিবারিক কলহের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সঠিকভাবে সংসারে টাকা দিতে না পেরে অভুক্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন অনেক শ্রমিকের পরিবার পরিজন। যাহা সত্যিই দুঃখজনক বলে অনেকেই উল্লেখ করেন।
নাইট তীর খেলায় অংশগ্রহণকারী পরিবহন শ্রমিক বাবলু জানান, ১০ টাকা দিয়ে একটি টিকেট কিনে ৭০ টাকা পাওয়া যায়। তাই রিকসা চালিয়ে যা পাই তা দিয়ে মজা করি প্রতিদিনই খেলি। কোন দিন পাই আবার বেশীরভাগ সময়ই পাই না। কুখ্যাত জুয়াড়ী হারুন মিয়া হচ্ছে কদমতলী ফেরীঘাটের নাইট তীর, জান্ডুমান্ডু ও ইয়াবার ডিলার এবং কুখ্যাত মাদক বিক্রেতা।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন – আইন প্রয়োগ কারী সংস্থার নানা বিষয়ে অনেক জোড়ালো ভূমিকা থাকারপরো এসব কুখ্যাত জুয়া আর মাদক ব্যাবসায়ীরা কি করে ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকে।আর কেনইবা এসব কুখ্যাত মুলনায়কদের আটক করা হয়না। বরং কুখ্যাত মাদক ও জুয়ারি হারুন প্রকাশ্যে দিবালোকে নেক্কার জনক কর্মকান্ড চালিয়ে বেশ আরাম আয়াশে দিনাতিপাত কাটাচ্ছে।এত বড় অপরাধ করেও কিভাবেই তারা পার পেয়ে যায়।
সাধারণ শ্রমজীবী লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান প্রতিদিনই এখানে নাইট তীর ও জান্ডুমান্ডু খেলার আসর বসে। সেই সাথে চলে মদ ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি ও সেবন । ডিবি, ও পুলিশের অসৎ সদস্যদের মেনেজ করেই রমরমা জুয়া, মদ, ইয়াবা ও গাঁজার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন হারুন মিয়া নামের জনৈক ব্যাক্তি যার কারণে উঠতি বয়সী কিশোর শ্রমিকদের বিপথগামী হচ্ছে। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী এসব অপরাধের আস্তানাগুলো বন্ধ হওয়া একান্ত প্রয়োজন।
এদিকে গত ১১ ডিসেম্বর রাত ৮ টায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী ফেরিঘাটের কুখ্যাত জুয়াড়ী হারুনের চায়না কলোনী, হেলাল মিয়ার কলোনী ও মেম্বার কলোনীতে দক্ষিণ সুরমা থানার পুলিশ এক অভিযান চালায়। পুলিশের এ অভিযানে স্পটটি ভেঙে দিয়ে ৪ জন জুয়াড়িকে আটক করে পুলিশ।তবে জুয়ার বোর্ডের পরিচালক হারুন ও গউছ ও জগলু কৌশকে পালিয়ে যায়।
পুলিশের এ অভিযানে এলাকার পরিবেশ কিছুটা শান্ত হলেও পর দিন থেকেই কুখ্যাত হারুন ও গউছ ও জগলু -বাবলুরা পুনরায় বীরদর্পে জুয়ার বোর্ড বসিয়ে মাদক বিক্রি সহ নানা অপরাধ মুলক কর্মকান্ড নিরাপদে চালিয়ে কামাই করে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। আবারো অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন আশপাশের মানুষ।
অভিযুক্ত হারুন মিয়ার উপর এলাকাবাসীর অভিযোগের শেষ নেই, এবিষয়ে হারুনের মোবাইলে যোগাযোগ করে জানতে চাইলে, তিনি হলি সিলেটের এ প্রতিবেদককে সুজাসাপটা জবাব দেন, কি করবেন আমাকে করেন! আমি প্রশাসন ও বড় বড় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করেই সব করছি । যত পার লিখ আমার হাত কত লম্বা না লিখলে বুঝবে না। আমার বিরুদ্ধে লিখেও কোনো লাভ হবেনা। আমাকে আর ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেনা প্রসাশন সব জানে একথা বলেই ফোনকল কেটে দিলেন।অনেক বার চেষ্টা করেও তাকে আর মোবাইলে পাওয়া যায়নী।রিং হলেও রিসিভ করেননি।
অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে দক্ষিণ সুরমা কদমতলী সহ আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে বেড়েই চলেছে মদ গাঁজা ও শিলং তীর, নাইট তীর জান্ডুমান্ডু তিনতাস সহ অসংখ্য অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানা এবিষয়ে –
ঃসিলেট বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আবুল হোসেন এর বক্তব্য জানতে চাইলে , তিনি হলি সিলেট কে জানান, পুলিশ এসব অপরাধীদের ধরতে সব সময় অ্যালার্ট রয়েছে। সম্প্রতি একদল পুলিশ নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে কুখ্যাত জুয়ারী হারুনের আস্তানা ভেঙ্গে দিয়েছি এবং অনেক মালামাল উদ্ধার করেছি। ফেরীঘাটে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে পাশাপাশি আমার ফাঁড়ি এলাকায় যেখানেই অপরাধের খোঁজ পাব সেখানেই অভিযান হবে।
ঃদক্ষিণ সুরমা থানার অফিসার ইনচার্জ ছুটিতে থাকায় ওসি তদন্ত সুমন কুমার চৌধুরীর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, কদমতলী ফেরিঘাট ও খোজারখলা খেয়াঘাট সহ বিভিন্ন এলাকায় শিলং তীর জুয়ার বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে আসছি। আপনার তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি অবগত হয়ে দ্রুত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঃদক্ষিণ সুরমা থানার সহকারী কমিশনার এর বক্তব্য জানতে চাইলে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, অপরাধীদের ধরতে পুলিশ সব সময় সোচ্চার রয়েছে। পুলিশ আন্তরিকতার সাথে বিষয়টি দেখছে এবং পুলিশের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
ঃ এছাড়া সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) সুদীপ দাসকে দক্ষিণ সুরমার ফেরিঘাট এলাকায় কুখ্যাত জুয়ারী হারুন ও গউছ জগলু এবং খোঁজারখলা খেয়াঘাট জিঞ্জির শাহের মাজার এলাকায় শিলং তীরের এজেন্ট ও মাদক বিক্রেতা কাশেম ও তার মেয়ে জাসমিন এর বিষয়ে অবহিত করা হলে তিনি তথ্য পেয়ে দ্রুত ব্যাবস্থা নিতে দক্ষিণ সুরমা থানাকে নির্দেশ প্রদান করবেন বলে জানান।
ঃএছাড়া অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ ক্রাইম) এর বক্তব্য জানতে চাইলে, তিনি ছুটিতে থাকায় আপাতত কিছু বলতে পারেননি তবে তিনি কর্মস্থলে ফিরে এসে বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। চলবে ———।